সাকশন মেশিন কেনাকাটা
সাকশন মেশিন হচ্ছে এমন এক ধরণের মেডিকেল ডিভাইস, যা দিয়ে অসুস্থ ব্যাক্তি বা অজ্ঞান রোগীদের শ্বাসনালী, মুখ, গলা, ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত অপসারণ করতে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে সাকশন মেশিন মূলত সাকার মেশিন বা অ্যাসপিরেটর নামেও পরিচিত। এটি মূলত একটি পাম্প এবং টিউবিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাকশন বা শোষণ শক্তি তৈরি করে যা তরল টেনে বের করে আনে। বর্তমানে, ইউওয়েল, এএন্ডডি, এবং ডেভিলবিস সহ অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সাকশন মেশিন বিডিস্টলে সেরা দামে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সাকশন মেশিন এর ধরণ
- মিনি সাকশন মেশিন ও পোর্টেবলঃ মিনি সাকশন মেশিন আকারে ছোট, হালকা এবং সাধারণত ব্যাটারি চালিত হয়ে থাকে। এই ধরণের সাকশন মেশিন সাধারণত পোর্টেবল হয়ে থাকে, যা সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায় এবং এদের সাকশন ক্ষমতা মাঝারি ধরনের হয়। ঢাকার বাইরে বা যেখানে লোডশেডিং বেশি হয়, সেখানে এগুলো জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে যেসব রোগীর দীর্ঘমেয়াদী যত্ন প্রয়োজন বা যাদের ঘন ঘন ভ্রমণ করতে হয়, তাদের জন্য এটি অপরিহার্য। এটি বাসা-বাড়ির জরুরি ব্যবহারের জন্য বা অ্যাম্বুলেন্সে প্রাথমিক সাকশনের কাজে উপযুক্ত। বাংলাদেশের যেকোনো জেলায় সহজে বহনযোগ্যতার কারণে এর চাহিদা বেশি।
- ইলেকট্রিক সাকশন মেশিনঃ এই মেশিনগুলো আকারে সাধারণত বড় এবং শক্তিশালী মোটর দিয়ে অপারেট করা হয়, যা সরাসরি বিদ্যুতের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি অপেক্ষাকৃত উচ্চ সাকশন ক্ষমতা প্রদান করে এবং একটানা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত ফ্লোর-স্ট্যান্ডিং মডেল বা ট্রলিতে বসানো থাকে। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা অপারেশন থিয়েটারে গুরুতর অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার সময় অত্যধিক তরল, রক্ত বা শ্লেষ্মা দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক সাকশন মেশিনের কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং অন্যান্য বড় শহরের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই মেশিনের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
কেন সাকশন মেশিনের ব্যবহার করা হয়?
সাকশন মেশিনের প্রধান কাজ হচ্ছে অসুস্থ ব্যাক্তির শরীর থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থ বা তরল শোষণ করে বের করে আনা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার অপরিহার্য।
- শ্বাসনালী পরিষ্কারঃ অচেতন রোগী, স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাদের ফুসফুসের সংক্রমণ রয়েছে, তাদের মুখ ও গলার শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার করার জন্য সাকশন মেশিন ব্যবহার করা হয়।
- অস্ত্রোপচারের স্থানঃ বিভিন্ন ধরনের সার্জারি বা অপারেশনের সময় ক্ষতস্থান থেকে রক্ত, পুঁজ এবং অতিরিক্ত তরল দ্রুত অপসারণ করে চিকিৎসকদের কাজের ক্ষেত্র স্পষ্ট করতে ও সংক্রমণ কমাতে সাকার মেশিন ব্যবহার করা হয়।
- ডেন্টাল সার্জারি ও চিকিৎসাঃ ডেন্টিস্টদের দাঁতের চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের সময় সাকশন মেশিন ব্যবহার করা হয়। কারণ এটি রোগীর মুখ থেকে লালা, পানি বা রক্তের মতো তরল পদার্থ দ্রুত শোষণ করে রোগীর আরাম নিশ্চিত করে।
- জরুরি শ্বাসরুদ্ধতাঃ ছোট শিশু, বৃদ্ধ লোক সহ যেকোনো বয়সী ব্যাক্তির শ্বাসরুদ্ধ বা চোকিংয়ের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে গলা বা শ্বাসনালীতে আটকে থাকা পদার্থ বের করে রোগীর জীবন বাঁচাতে সাকার মেশিন ব্যবহার করা হয়।
- ক্ষতস্থান পরিচর্যাঃ অনেক সময় অপারেশনের পর রোগীর শরীরে ঘা বা ক্ষত স্থান সহজে শোকায় না। তাই, গভীর ক্ষত বা শয্যাশায়ী রোগীর ঘা থেকে ক্রমাগত তরল বের হলে তা নিষ্কাশন করার জন্য সাকশন মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষত স্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
- বাড়িতে কফ বের করাঃ এটি দীর্ঘদিন অসুস্থতায় বিশেষ করে ফুসফুসে সমস্যা জনিত রোগীদের বাড়িতে শুয়ে থাকা অবস্থায় সহজে কফ বের করার কাজে ব্যবহার করা হয়, যা রোগীকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
বাজেট
ধরণ, সাকশন ক্ষমতা এবং ব্র্যান্ডের সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে সাকশন মেশিনের দাম ৬,৫০০ টাকা থেকে ১১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি যদি বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের জন্য সাশ্রয়ী দামের কোনো সাকার মেশিন কিনতে চান, তাহলে পোর্টেবল বা মিনি সাকশন মেশিনগুলো আপনার জন্য সেরা হবে, যেগুলোর দাম সাধারণত ৭,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অপরদিকে, হাসপাতাল, ক্লিনিক বা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য শক্তিশালী ও হাই-পারফরম্যান্স ইলেকট্রিক মডেলগুলোর প্রয়োজন হয়, যার দাম বাংলাদেশে ১৫,৫০০ টাকা থেকে শুরু তবে, ফিচার ও ব্র্যান্ড ভেদে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হয়ে থাকে। সাকশন মেশিন কেনার আগে, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মেশিনের সাকশন পাওয়ার, ওয়ারেন্টি এবং ব্র্যান্ডের রিভিউ ইত্যাদি বিডিস্টলে যাচাই করে বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে সরাসরি অর্ডার করতে পারেন।
হাসপাতালে সাকশন মেশিন কিভাবে সেট আপ করবেন
হাসপাতালে বা ক্লিনিকে সাকশন মেশিন সঠিকভাবে সেট আপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল মেশিনের সঠিক কার্যকারিতাই নিশ্চিত করবে না, বরং রোগীর সুরক্ষা ও সংক্রমণের ঝুঁকিও কমাবে। নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করে আপনি ইলেকট্রিক সাকশন মেশিন সেট আপ করতে পারবেন
স্টেপ-১ঃ সেটআপ
- প্রথমে সাকশন মেশিনটি অবশ্যই একটি সমতল, শক্ত এবং পরিষ্কার পৃষ্ঠে বিশেষ করে ট্রলি বা মেঝের উপর স্থাপন করবেন। খেয়াল রাখবেন যেন এটির আশেপাশে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল থাকে।
- পরবর্তীতে মেশিনের পাওয়ার কর্ডটি গ্রাউন্ডেড বৈদ্যুতিক আউটলেট বা মাল্টিপ্লাগে প্লাগ ইন করবেন এবং সংযোগটি যেন স্থির থাকে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- তাছাড়া, সাকার মেশিন সেট আপ শুরু করার আগে মেডিকেল স্টাফদের অবশ্যই গ্লাভস এবং মাস্ক পরিধান করতে হবে, যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।
স্টেপ-২ঃ ক্যানিস্টার ও ভ্যাকুউম পোর্ট সংযোগ
- সাকশন মেশিনের পাশে বা হুক/ট্রলিতে সাকশন ক্যানিস্টার বা কালেকশন জারটির মুখ উপরের দিক করে শক্তভাবে সেট করবেন।
- তারপর একটি মোটা টিউবিং ব্যবহার করে ক্যানিস্টারের ঢাকনার উপর থাকা "ভ্যাকুউম" বা "ইনলেট" পোর্টের সাথে মেশিনের "সাকশন ইনলেট" বা "ভ্যাকুউম পোর্ট" সংযোগ করবেন।
স্টেপ-৩ঃ রোগীর টিউবিং ও ফিল্টার স্থাপন
- আরও একটি টিউবিং ব্যবহার করে ক্যানিস্টারের ঢাকনার উপর থাকা "প্যাশেন্ট" বা "আউটলেট" পোর্টের সাথে সংযুক্ত করবেন। এই টিউবিং-এর অন্য প্রান্তটি সাকশন ক্যাথেটার বা প্রোবের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
- কিছু সিস্টেমে ক্যানিস্টার এবং মেশিনের মাঝে জীবাণু ও তরল প্রবেশ আটকাতে একটি ব্যাকটেরিয়া ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। এটি যদি সাকশন মেশিনের সাথে দেওয়া থাকে তাহলে ম্যানুয়াল গাইড অনুযায়ী সংযোগ করবেন।
স্টেপ-৪ঃ পাওয়ার অন ও সাকশন চাপ নির্ধারণ
- উপরের সেট আপ সফল ভাবে সম্পন্ন করার পর এই ধাপে সাকশন মেশিনের পাওয়ার অন করবেন|
- মেশিনের সামনে থাকা ম্যানোমিটার (প্রেশার গউজ) ব্যবহার করে সাকশন প্রেশার অ্যাডজাস্ট করবেন।
- তবে, সাকশন প্রেশার সেট করার ক্ষেত্রে প্যাশেন্ট শিশু না প্রাপ্তবয়স্ক তা বিবেচনা করবেন। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ এমএমএইচজি সেট করতে হয়। এছাড়া, শিশুদের জন্য সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ এমএমএইচজি এর মধ্যে সেট করতে হয়।
- সাকশন ক্যাথেটার বা টিউবের মুখ কিছুক্ষণের জন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে দেখবেন যে চাপ সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা।
[বিঃদ্রঃ সাকশন চাপ সবসময় চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী সেট করবেন।]
স্টেপ-৫ঃ সাকশন প্রক্রিয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
- রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সাইজের সাকশন ক্যাথেটার বা প্রোব রোগীর শ্বাসনালী বা ক্ষতস্থানে ব্যবহার করবেন।
- প্রতিবার ব্যবহারের পরে বা ক্যানিস্টার পূর্ণ হওয়ার আগে অবশ্যই ক্যানিস্টারটি খুলে পরিষ্কার বা ডিসপোজেবল হলে পরিবর্তন করে নিবেন। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এই পদক্ষেপগুলি সাবধানতার সাথে অনুসরণ করলে কেবল সাকশন মেশিনটি সঠিকভাবে কাজ করবে তা না - এটি আপনার রোগীর নিরাপত্তা এবং সুস্থতা রক্ষার জন্য কার্যকর হবে।