অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কেনাকাটা
গুরুতর মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে, প্রতিটি সেকেন্ড রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে একটি নির্ভরযোগ্য "ইমারজেন্সি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর এবং পেলেও তা ব্যায়বহুল হয়ে থাকে। বর্তমানে, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিটির ভিতরে "আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" থেকে শুরু করে বিশেষায়িত "ফ্রীজার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" সহ বিভিন্ন "অনলাইন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" সারা বাংলাদেশে ব্যাপী রয়েছে। ফলে, আপনি সহজেই বিস্তারিত জেনে দ্রুত ও সঠিক "অ্যাম্বুলেন্স নাম্বার" খুঁজে পাবেন।
বাংলাদেশে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ধরণ
রোগীর নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সঠিক "এম্বুলেন্স সার্ভিস" নেওয়া জুরুরী। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রয়েছে, সেগুলো ধরণ অনুযায়ী সুবিধা এবং ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
১। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস / সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
এটি মূলত ভ্রাম্যমাণ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট, যা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এক হাসপাতালের আইসিইউ থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরের জন্য এটিই সেরা বাহন। এই ধরণের অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ডিফিব্রিললাটর্স, ইনফিউশন পাম্প, সাকশন মেশিন, অক্সিজেন সহ উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। আর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে একজন দক্ষ প্যারামেডিক বা ডাক্তার সাথে থাকেন। এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। "ঢাকার ভিতরে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" এর ভাড়া সাধারণত দূরত্ব, প্রয়োজনীয় মেডিকেল স্টাফ এবং লাইফ সাপোর্টের সময়কালের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে।
২।এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
স্ট্যাবল রোগীদের আরামদায়ক ভাবে পরিবহন করার জন্য এসি অ্যাম্বুলেন্স হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস। বিশেষ করে এক জেলা থেকে অন্য জেলাতে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য যেমন "ঢাকা অ্যাম্বুলেন্স" সার্ভিসে আসা। তাছাড়া, এই ধরণের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রধান সুবিধা হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় অত্যন্ত জরুরি। এতে একটি স্ট্রেচার, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং একজন ফার্স্ট-এইড অ্যাটেনডেন্টও থাকেন। এর ভাড়া নন-এসি অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে বেশি তবে আইসিইউ সেটআপের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়ে থাকে।
৩। নন-এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
হাসপাতালে ভর্তি, ডিসচার্জ বা ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য স্ট্যাবল রোগীদের পরিবহনের জন্য এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং সাশ্রয়ী "অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস"। এটি সবচেয়ে মৌলিক চাহিদাগুলো সরবরাহ করে থাকে যেমন- একটি স্ট্রেচার, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং একটি ফার্স্ট-এইড বক্স। এটি নন-ইমার্জেন্সি রোগী পরিবহনের জন্য সবচেয়ে সস্তা এবং সহজলভ্য বিকল্প।
৪। ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি)
এটি রোগীদের জন্য নয়, বরং একজন মৃত ব্যক্তিকে মর্যাদার সাথে পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই "লাশ বাহী গাড়ী" (লাশবাহী গাড়ি)-তে একটি বিল্ট-ইন ফ্রিজার বক্স থাকে, যা দীর্ঘ দূরত্বের লাশ বহন বা দেরি দাফন করার ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে থাকে। এটি মর্গের অ্যাম্বুলেন্স বা "লাশবাহী এম্বুলেন্স" নামেও বাংলাদেশে পরিচিত। এতে একটি তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ফ্রিজার কেবিনেট রয়েছে।
- সিঙ্গেল কেবিন ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সঃ এটি স্ট্যান্ডার্ড "ফ্রীজার অ্যাম্বুলেন্স" যা মৃতদেহ পরিবহন করে, এবং ড্রাইভারের জন্য একটি পৃথক কেবিন থাকে।
- ডাবল কেবিন ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সঃ এই "লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি"-এর চাহিদা বেশি, কারণ এতে একটি বর্ধিত কেবিন থাকে, যা ২-৪ জন পরিবারের সদস্যকে তাদের প্রিয়জনের লাশের সাথে যাওয়ার জন্য জায়গা প্রদান করে থাকে।
ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর ভাড়া সাধারণত দূরত্বের উপর যেমন, প্রতি কিলোমিটারে হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।
ঢাকা শহরের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (ঢাকা এম্বুলেন্স সার্ভিস)
"ঢাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" খুঁজে পাওয়া সহজ হয় যখন আপনি প্রধান সার্ভিস হাবগুলো জানেন। বেশিরভাগ "ট্রাস্ট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস" প্রদানকারী সকল প্রধান প্রধান এরিয়া গুলোতে যাতায়াত করে থাকে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস মিরপুর
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস উত্তরা
- এয়ারপোর্ট এলাকা - এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং রোগী রিসিভ করার জন্য
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ধানমন্ডি (অনেক প্রধান হাসপাতালের কেন্দ্রস্থল)
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস গুলশান ও বনানী
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রামপুরা
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস মগবাজার
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস মোহাম্মদপুর / মোহাম্মদপুর অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস শাহজাহানপুর
চট্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (সিটিজি)
বাংলাদেশের বন্দর নগরী হিসেবে, চট্টগ্রামে "ইমারজেন্সি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস"-এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এই ধরণের সার্ভিস মূলত চট্টগ্রামের প্রধান হাসপাতালগুলো এবং আবাসিক এলাকাগুলোর আশেপাশে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এরিয়া সমূহ -
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পাঁচলাইশ (অনেক প্রধান ক্লিনিক ও হাসপাতালের কাছে)
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পাহাড়তলী
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বায়েজিদ
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস খুলশী
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কোতোয়ালী (চট্টগ্রাম সদর)
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস হালিশহর
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চাঁদগাঁও
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্দর এলাকা
সারা বাংলাদেশে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
বাংলাদেশে বিভাগীয় শহরের বাইরেও নির্ভরযোগ্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পাওয়া যায়। জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থানীয় চাহিদা এবং আন্তঃ-শহর স্থানান্তরের জন্য ডেডিকেটেড অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রয়েছে।
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সাভার
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নারায়ণগঞ্জ
- অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস হাজারীবাগ
- গাজীপুর অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
- বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
- সিলেট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
- রাজশাহী অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
- খুলনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস
কল করে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেওয়ার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই জানা থাকা উচিৎ
- আপনার এলাকার সরকারি জরুরি সেবার নম্বর যেমন ৯৯৯ বা নির্ভরযোগ্য বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নম্বর আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন। অনেক হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস থাকে, তাদের নম্বরও জেনে রাখা ভালো।
- কল করে প্রথমেই রোগীর বর্তমান অবস্থা সংক্ষেপে, স্পষ্টভাবে বলবেন। যেমনঃ রোগীর কি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? বুকে ব্যথা? তিনি কি দুর্ঘটনায় আহত? জ্ঞান আছে কি না? অথবা লাশ বহন করতে চান, এই তথ্যগুলো অপারেটরকে জানাবেন। তাহলে, তারা সঠিক ধরনের অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে সাহায্য করবে।
- আপনি ঠিক কোথায় আছেন, তার সবচেয়ে সঠিক ঠিকানা দিন। বাসার নম্বর, রাস্তার নাম, এলাকার নাম বলার পাশাপাশি কাছাকাছি সুপরিচিত কোনো স্থান যেমন: কোনো স্কুল, মসজিদ, বাজার বা বড় দোকান উল্লেখ করবেন। এতে চালকের পক্ষে দ্রুত আপনাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
- অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কত তা আগেই জিজ্ঞাসা করে নিবেন। ভাড়া কি নির্দিষ্ট, নাকি দূরত্ব বা সময়ের ওপর নির্ভরশীল? তারা কীভাবে পেমেন্ট গ্রহণ করে (নগদ, কার্ড, নাকি মোবাইল ব্যাংকিং) তা নিশ্চিত হয়ে নিবেন। অনেক সময় পরে এ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক তৈরি হয়।
- অ্যাম্বুলেন্সটি আপনার অবস্থানে পৌঁছাতে আনুমানিক কত সময় লাগবে তা জিজ্ঞাসা করবেন। যদি তারা খুব বেশি সময় লাগবে বলে জানায়, তাহলে আপনার হাতে অন্য কোনো বিকল্প যেমন অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কল করার নাম্বার থাকলে, সেটির জন্যও চেষ্টা করতে পারেন।
- আপনি রোগীকে কোন হাসপাতালে নিতে চান তা চালককে বা অপারেটরকে আগেই জানিয়ে রাখবেন। এতে তারা সবচেয়ে কম সময়ে পৌঁছানোর রাস্তাটি আগে থেকে পরিকল্পনায় রাখবে।
- অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই রোগীকে যতটুকু সম্ভব রেডি রাখবেন। তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং তার রোগ সংক্রান্ত রিপোর্ট হাসপাতালে প্রয়োজন হতে পারে। তাই, এমন জিনিসপত্র একটি ব্যাগে গুছিয়ে রাখবেন।
- আপনার নিজের ফোন নম্বরের পাশাপাশি বাড়ির অন্য কারো বা কোনো প্রতিবেশীর নম্বর দিন, যিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। যদি কোনো কারণে আপনার নম্বর ব্যস্ত বা বন্ধ পাওয়া যায়, তবে তারা যেন বিকল্প নম্বরে যোগাযোগ করতে পারে।