
উচ্চ রক্তচাপ, বা হাইপার টেনশন মূলত গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে। তবে, দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর বেশ কয়েকটি সহজ এবং কার্যকর উপায় রয়েছে যা আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে ঘরে বসেই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
১। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে গভীর শ্বাস নেওয়া। গভীরভাবে শ্বাস নিলে শরীরে বেশি অক্সিজেন ঢোকে, তাই প্রেসার কমে। তাছাড়া, আপনি যদি টানা কয়েক মিনিট ধরে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে, যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
২। গরম পানির ব্যবহারঃ হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গেলে হালকা গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ তাহলে বেশ আরাম পাবেন। কারণ এতে শরীরের মাংসপেশিগুলো শিথিল হয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপও দ্রুত কমে আসে।
৩। লবণের পরিমিত ব্যবহারঃ অনেকেরই অভ্যাস আছে খাবারের পাতে কাঁচা লবণ খাওয়ার, আর এটাই কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের একটা বড় কারণ। এই অভ্যাসটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদলে ফেলা উচিত। চেষ্টা করবেন দিনে দেড় গ্রামের বেশি লবণ যেন খাওয়া না হয়।
৪। কাজের মাঝে বিরতিঃ কম্পিউটার বা ফোনে বেশিক্ষণ কাজ করলে মানসিক চাপ বাড়ে। যার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কাজ করার সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিতে পারেন এবং চোখকে বিশ্রাম দিতে পারেন। এতে শরীর এবং মন দুই-ই ভালো থাকবে।
৫। হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাঃ হালকা ব্যায়াম অথবা হাঁটাহাঁটি করলে দ্রুত রক্তচাপ কমে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরও সুস্থ থাকে।
৬। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ মানসিক চাপও উচ্চ রক্তচাপের একটি কারণ। মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন, বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক উপায়ের সাহায্য নিতে পারেন। এটি আপনাকে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
৭। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামঃ বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে। তাই, রাতে মিনিমাম ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৮। ভেষজ উপাদানঃ তুলসি পাতা, লবঙ্গ, আদা, এবং হলুদ- এই ধরনের কিছু ভেষজ উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহার করার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
৯। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিটরুটঃ বিটরুট এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তনালীকে প্রসারিত ও শিথিল করে। এর ফলে রক্তচাপ কমে আসে এবং হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমে। নিয়মিত বিটরুটের রস পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাসা-বাড়িতে নিজে থেকে বা পরিবারের সদস্যদের দিয়ে রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপার জন্য আপনি ডিজিটাল এবং মানসম্পন্ন স্টেথোস্কোপের রাখতে পারেন। নতুন এবং ভালো মানের স্টেথোস্কোপের দাম ও অন্যান্য তথ্য জানতে আমাদের স্টেথোস্কোপ মূল্য তালিকা পেইজটি ভিজিট করতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য বাড়তি কিছু সতর্কতা
১। যদি আপনার রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে চলাফেরা কমিয়ে দিবেন। কারণ এতে রক্তচাপ আরও বেড়ে যেতে পারে।
২। দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রয়োজনে তেঁতুলের রস খেতে পারেন। বাসায় যদি তেঁতুলের রস না থাকে তাহলে লেবুর পানিও খেতে পারেন।
৩। আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আদা রাখবেন, কারণ আদা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে।
৪। রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রক্রিয়াজাত এবং তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকবেন। সেই সঙ্গে লবণ, চর্বিযুক্ত খাবার এবং ধূমপানও এড়িয়ে চলবেন। কারণ এসব জিনিস রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫। এছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ থাকাকালীন সময়ে চিনি, তেল, ঘি, মাখন ও রেডমিট খাওয়া বন্ধ রাখবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, উচ্চ রক্তচাপ একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সবসময় যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং মানসিক শান্তি থাকা দরকার। এই সহজ বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি দ্রুত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: September 09, 2025