bdstall.com

বাংলাদেশে ড্রোন লাইসেন্স কিভাবে পাবেন

বাংলাদেশে ড্রোনের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু শখের জন্য নয়, পেশাদার কাজেও যেমন ফটোস্যুট, ভিডিওগ্রাফি এর মত ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু আপনি যদি বাংলাদেশে ড্রোন চালাতে চান, তবে কিছু নিয়মকানুন আছে, যেগুলো মেনে চলতে হয়। প্রশ্ন হলো, আপনি কীভাবে বুঝবেন যে আপনার ড্রোনের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন? আপনি যদি বাংলাদেশে পেশাদার ড্রোন কিনেন, তাহলে অবশ্যই আপনার ড্রোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হতে পারে। তাই, ড্রোন পরিচালনা, নিরাপত্তা এবং আইন মেনে চলার জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (CAAB) নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী যাচাই করবেন।

 

তাহলে চলুন কিভাবে বাংলাদেশে ড্রোন লাইসেন্স পাবেন, কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে এবং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন সে সকল বিষয় বিস্তারিত জেনে নেয়।

 

ড্রোন লাইসেন্সের জন্য যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে

১. ড্রোনের ক্লাস

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ক্লাসের ড্রোন পাওয়া যায়। আপনি যে ক্লাসের ড্রোন ব্যবহার করবেন, তার উপর নির্ভর করে লাইসেন্স এবং অনুমতির প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ড্রোন চারটি ক্লাস ভাগ করা হয়ঃ

  • ক্লাস এঃ সাধারণত ব্যাক্তিগত বা শখের জন্য ব্যবহৃত ড্রোন। এই ড্রোনের ওজন ৭ কেজির কম।
  • ক্লাস বিঃ গবেষণা বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত ড্রোন। এই ড্রোনের ওজন ৭ কেজির বেশি।
  • ক্লাস সিঃ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোন। এরও ওজন ৭ কেজির বেশি।
  • ক্লাস ডিঃ রাষ্ট্রীয় বা সামরিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোন, যা বিশেষ অনুমতি ছাড়া চালানো যায় না।

 

২. লাইসেন্সের জন্য আবেদন

ড্রোন পরিচালনা করতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও, ড্রোনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন ফর্ম সিএএবি-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। আপনি যখন আপনার আবেদন পূরণ করবেন, তখন আপনি সিরিয়াল নম্বরটি হুবহু আপনার ড্রোনের সাথে মিলিয়ে লিখেছেন কিনা তা যাচাই করে নিবেন। একটি ছোট ভুল আপনার আবেদনটিকে সারির শুরুতে ফিরিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া, আবেদন করার সময় আপনাকে আরও কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে, যেমনঃ

  • ড্রোনের ওজন, সাইজ, মডেল ইত্যাদি সহ বিস্তারিত বিবরণ।
  • আপনার ড্রোন চালানোর উদ্দেশ্য যেমন ব্যক্তিগত, গবেষণা, বাণিজ্যিক, ইত্যাদি যেকোনোটি জানাতে হবে।
  • ড্রোন উড্ডয়ন করার স্থান ও সময়।
  • নিরাপত্তা পরিকল্পনা।

এছাড়া, ড্রোনের বিমা কভারেজ এবং এনওসি (নো অবজেক্ট সার্টিফিকেট)-ও জমা দিতে হবে। এনওসি মূলত আপনি যে নির্দিষ্ট জায়গায় ড্রোন চালানোর পরিকল্পনা করছেন তার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা জমির মালিকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়াকে বোঝায়। সিএএবি তে এসব তথ্য জমা দেওয়ার পর তারা আপনার আবেদন যাচাই করবে এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করবে। সিএএবি থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া রাতারাতি কোনও প্রক্রিয়া নয়। অন্যদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগতে পারে। তাই, সেই অনুযায়ী আপনি পরিকল্পনা করবেন।

 

৩. রিমোট পাইলট সার্টিফিকেট (আরপিসি)

ড্রোন চালানোর জন্য রিমোট পাইলট সার্টিফিকেট (আরপিসি) প্রয়োজন। এটি আপনাকে একজন দক্ষ এবং নিরাপদ ড্রোন অপারেটর হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করবে। 

 

এটা পেতে হলে আপনাকে সিএএবি অনুমোদিত কোন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের মধ্যে আপনি ড্রোন পরিচালনার পদ্ধতি, নিরাপত্তা, এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জন করবেন। প্রশিক্ষণ শেষে একটি পরীক্ষা দিতে হবে এবং তারপর সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। তাই বলা যায় যে আপনি শুধু ড্রোন কিনছো তা নয়। সিএএবি-অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কোর্সের খরচ, ড্রোন বীমা এবং আবেদনের জন্য সম্ভাব্য যেকোনো সরকারি ফি বিবেচনা করতে হবে। তাহলে পরবর্তীতে খরচ নিয়ে মাথা ব্যাথা হবে না।

 

বাংলাদেশে ড্রোন অপারেটর প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো সিএএবি অনুমোদিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আপনি সেখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।

 

৪. ড্রোন নিবন্ধন

এছাড়া, যদি আপনার ড্রোনের ওজন ২৪৮-২৫০ গ্রাম বা তার বেশি হয়, তবে সেটি সিএএবি-এ রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনাকে ড্রোন কেনার রিসিট, ড্রোনের ফিচার, বিমা কভারেজের সার্টিফিকেট ইত্যাদি জমা দিতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ, কিন্তু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

৫. নিরাপত্তা এবং বিমা

ড্রোন পরিচালনা করার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশে ড্রোন অপারেটরদের জন্য কিছু নিরাপত্তা জনিত নিয়ম কানুন রয়েছেঃ

  • বিমা কভারেজঃ ড্রোনের জন্য যথাযথ বিমা কভারেজ থাকতে হবে। এটা নিশ্চিত করে যে, আপনি যদি ড্রোন চালানোর সময় কোনো দুর্ঘটনায় পড়েন, তাহলে আপনি আইনগত ও আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকবেন।
  • ফায়ার এক্সটিংগুইশারঃ যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ড্রোন চালানোর স্থান থেকে কাছাকাছি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
  • নিরাপত্তা পরিকল্পনাঃ ড্রোন চালানোর সময় দুর্ঘটনা বা সমস্যা হলে তার সমাধান কীভাবে করবেন, তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।

 

৬. নিষিদ্ধ এরিয়া

বাংলাদেশে কিছু জায়গায় ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ রয়েছে। যেমনঃ

  • সামরিক এলাকাঃ যেখানে ড্রোন উড্ডয়ন করা আইনত নিষিদ্ধ।
  • বিমানবন্দরঃ বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ড্রোন উড্ডয়ন করা যাবে না।
  • জনবহুল এলাকাঃ যেখানে মানুষের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি।

ড্রোন উড্ডয়ন করার আগে সিএএবি-এর অনুমতি নিয়ে আপনার ড্রোন পরিচালনার স্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

 

৭. জরিমানা ও শাস্তি

ড্রোনের নিরাপত্তা রুলস বা প্রসিডিউর অনুসরণ না করলে শাস্তি বা জরিমানা হতে পারে। যেসব শাস্তি হতে পারেঃ

  • জরিমানাঃ নির্ধারিত নিয়মাবলী না মানলে জরিমানা হতে পারে।
  • কারাদণ্ডঃ যদি ড্রোন উড্ডয়নের কারণে জননিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়।
  • লাইসেন্স বাতিলঃ নিয়ম না মানলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

ড্রোন অপারেট করার জন্য সঠিক লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ এবং অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। বাংলাদেশে ড্রোন চালানোর জন্য সিএএবি-এর নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে, যাতে আপনার ড্রোন পরিচালনা আইনসম্মত ও নিরাপদ হয়।

 

যদি আপনি একজন পেশাদার ড্রোন অপারেটর হতে চান, তবে উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই লাইসেন্স পেতে পারেন এবং একজন নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ড্রোন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: June 18, 2025
Reviews (0) Write a Review