
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত একটি নাম হচ্ছে জাফলং ।  পাহাড় আর সবুজে ঘেরা এই জায়গাটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভারতের  মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেসে অবস্থিত। সিলেট থেকে জাফলং এর দুরত্ব প্রায় ৬০  কিলোমিটার। সড়কপথে সিলেট থেকে জাফুলং যেতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। বামপাশে  বাংলাদেশের চিরায়ত গ্রামবাংলা, ডানপাশে ভারতীয় পাহাড় আর কিছু সময় পর পরই  দেখা মিলবে পাহাড়ি ঝর্ণার। এসব মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে  যাওয়া, ব্যাপারটা কেমন যেন রোমাঞ্চকর। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে  আসা ঝর্ণাগুলি দেখলে যে কেউ তার ভ্রমনের ক্লান্তিটা অনায়াসে ভুলে যাবেন।

জাফলং  পৌঁছেই যে জিনিসটা আপনাকে বিস্মিত করবে সেটা হলো ছোট বড় অনেক পাথরের স্তুপ  আর সমস্ত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পাথর। অনেকেরই ভেবে বসতে  পারেন কোন ভুল জায়গায় চলে এসেছেন কিনা! ভারতের হিমালয় থেকে একটি নদি আমাদের  দেশে এসেছে, আর নদির স্রোত সাথে করে নিয়ে এসেছে অসংখ্য পাথর। স্থানীয় লোকজন  এই পাথরগুলি সংগ্রহ করে থাকেন আর এই পাথরই পরবর্তিতে সারা দেশ নির্মাণ  কাজে ব্যাবহার করা হয়। 

ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের কোল বেয়ে আসা নদিটির নাম  মেরি। নদির ঘাটে অনেক নৌকা পাওয়া যায়। নদির স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় করে যে কেউ  ঘুরে আসতে পারেন। নৌকায় করে নদি পথে চলে যেতে পারেন জিরো পয়েন্টে। একপাশে  আমাদের বাংলাদেশ আর অন্য পাশে ভারত, মাঝখানে মেরি নদি। খুব কাছ থেকে ভারতীয়  পাহাড় আর পাহাড় ঘেরা সবুজ অরণ্য দেখতে ভালোই লাগবে। আপনি চাইলে নদির পানিতে  গোসল সেরে নিতে পারেন, না হলে নিদেনপক্ষে পানিতে পা ভিজিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে  আসতে পারেন। আবার নদি পার হয়ে অন্য পাশে খাসিয়া পল্লি থেকেও ঘুরে আসা যায়।  প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল হয়ে টিকে থাকা খাসিয়াদের জীবন যাত্রা দেখে আসতে  পারেন। খাসিয়াদের পান বাগান, সুপারি গাছের বাগান আর খাসিয়া পল্লির পাশের  চা বাগানটাও ঘুরে আসা যায়। 
মেরি নদির পাশের পাহাড়ে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।  পাহাড় এর গা বেয়ে উপরে উঠে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। চারপাশের সবুজ  গাছ আর হালকা বাতাসে একটু জিরিয়ে নেয়াটাও আপনাকে অন্য রকম শান্তির পরশ এনে  দিবে। আমরা যারা শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতার শেকলে আবদ্ধ, বিষাক্ত বাতাসে  শ্বাস নিতে নিতে নিজেদের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছি, খুব সহজেই একটু শান্তিময়  প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে আসতে পারি। নিজেদের অবসরগুলিকে ভরিয়ে দিতে পারি  নির্মল আনন্দে।